পরিত্যক্ত জমিতে বিভিন্ন জাতের ফল চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন রিপন

বিশেষ প্রতিবেদক

বুধবার, ১৯ জুলাই ২০২৩, দুপুর ০৪:৪৭


রংপুর শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারি ইউনিয়নের চর চল্লিশসাল। যত দূর চোখ যাবে তিস্তার ধু-ধু বালু চর। এ চরের ১২ একর পরিত্যক্ত জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন রবিউল হাসান রিপন নামের এক তরুণ উদ্যোক্তা।

রবিউল হাসান রিপনের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জের ছোট উছিরপুর গ্রামে। তিনি পেশায় একজন ঠিকাদার। রবিউল ছোট বেলা থেকেই ফল খেতে ভালোবাসতেন। এই থেকেই ফল গাছের প্রতি ভালোবাসাটা একটু বেশিই তাঁর। রবিউল তিন বছর আগে মহিপুর শেখ হাসিনা সেতু এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে আসেন। এ সময় চর চল্লিশসাল এলাকায় ঘুরতে গেলে চোখে পড়ে পরিত্যক্ত বালুচর। এসব পরিত্যক্ত ধু-ধু বালুচর দেখে তার মাথায় চেপে বসে বাগান তৈরির পরিকল্পনা।

বাগানটিতে গিয়ে দেখা গেছে, ১২ একর জামিতে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে ৩-৪ ফুট উচ্চতার প্রায় চার হাজার আম গাছ। আমের ওজনে গাছ নুয়ে পড়ার মতো অবস্থা। একেকটি আম গাছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ কেজি করে আম ধরেছে। আবার কিছু কিছু আম ধরা গাছে দেখা যায় আমের মুকুলসহ ছোট বড় গুটি আম। আম গাছের ফাঁকে ফাঁকে সাথি ফসল হিসাবে চাষ করা হয়েছে বাদাম। গাছগুলো থেকে বাদাম সংগ্রহ করার পর, অবশিষ্ট বাদাম গাছগুলোই আবার বাগানে জৈব সার হিসাবে ব্যবহার করা হবে। আম গাছগুলোর পাশেই দাঁড়িয়ে আছে পেয়ারা, লেবু, মাল্টা, ড্রাগনসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফল গাছ।

রবিউল হাসান স্থানীয় কয়েকজন লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করেন তিনি সেখানকার ধু-ধু বালুচরেই তৈরি করবেন আম বাগান। যেই কথা সেই কাজ পরিত্যক্ত জমির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে দু একর জমি কিনে নেন। প্রথমবার পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করেন অল্প কিছু আম, পেয়ারা ও লেবু গাছের চারা। চারা লাগানোর ৬ মাসের মধ্যেই আশানুরূপ ফলন পাওয়ায় তিনি আরও বড় পরিসরে বাগান করার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় তিনি ১০ বছরের চুক্তিতে ২ হাজার টাকা করে ১২ একর জমি লিজ নেন। প্রায় ১৬ লাখ টাকা ব্যয় করে বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন জাতের আম গাছের চারা সংগ্রহ করে নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলেন বিশাল আম বাগান। প্রথমবারেই তিনি আম বিক্রি করে আয় করেন প্রায় ৬ লাখ টাকা।

রবিউল হাসান বলেন, আম বাগানে কাটিমন, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, কিউজাই, আলফানসো, হানিডিউ, বারি ফোর, ইনডিয়ান ফজলি, কারাবাউ, ক্ষীরসাপাত, অরুনা, আম্রপালি, মল্লিকা, মিশ্রিদানা, নিলাম্বরী, কালীভোগ, বারোমাসি, কাঁচামিঠাসহ ২২ জাতের প্রায় ৪ হাজার আম গাছ আছে। এসব আম দেশি আম শেষে পাওয়া যায়।

একেকটি আমের ওজন প্রায় হাফ কেজি থেকে এক কেজি পর্যন্ত হয়। এসব আম কাঁচা ও অপরিপক্ব অবস্থায়ও সুমিষ্ট এবং সুস্বাদু হওয়ায় বিভিন্ন সুপার শপ, চাইনিজ রেস্তোরাঁগুলো সালাদ ও আচার তৈরির জন্য কিনে থাকেন। পাইকারি দামে প্রতি কেজি আম বিক্রি হয় এক থেকে দেড় শ টাকা কেজি দরে। এসব আম সারা বছরই পাওয়া যায় বাগানে। পাইকাররা এসব আম বাগান থেকে কিনে নিয়ে যান বলে জানান রবিউল হাসান।

রবিউল হাসানের বাগানে শুধু আমেই নয় পেয়ারা, লেবু, কমলা, মাল্টা ও ড্রাগনসহ আরও বিভিন্ন জাতের প্রায় ৩ হাজার ফল গাছ রয়েছে। এখন সব মিলিয়ে তাঁর বাগানে ৭ হাজার ফলের গাছ আছে বলে জানান তিনি। তিনি আশা করছেন এ মৌসুমেও তিনি ৮ থেকে ৯ লাখ টাকার আম, পেয়ারা, লেবু, মাল্টা, কমলা ও ড্রাগন বিক্রি করবেন।

স্থানীয়রা জানান, তিন বছর আগে এসব জমি শুধু ধু-ধু বালুরচর হয়ে পরেছিল। এখানে কোনো কিছুই চাষ হতো না। সেই জামিতেই এখন যেভাবে ফল চাষ হচ্ছে তা অবাক করার মতো।

এমএসি/আরএইচ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়

Link copied